
– শায়েখ আতিক উল্লাহ
১: মুমিন হবে স্বাস্থ্যসচেতন। সুস্থ্যসবল। শক্তপোক্ত। শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যেই চনমনে হবে। নবীজি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈমান-আমলের পাশাপাশি সাহাবায়ে কেরামের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর রাখতেন। তাদেরকে স্বাস্থ্যসচেতন থাকার ব্যাপারে উৎসাহ যোগাতেন। পরামর্শ দিতেন। সাহাবায়ে কেরাম অসুস্থ্য হলে,তাদেরকে নিজউদ্যোগে ডাক্তারের কাছে পাঠাতেন। জাবের রা. বলেছেন,
بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَى أُبَيٍّ طَبِيبًا فَقَطَعَ مِنْهُ عِرْقًا
উবাইয়ের কাছে একজন ডাক্তার পাঠিয়েছে নবীজি। ডাক্তার উবাইয়ের একটি শিরা কেটে রক্তমোক্ষণ করে (আবু দাউদ ৩৮৬৪)।
২. ডাক্তারের কাছে পাঠানোর পাশাপাশি, কখনো অবস্থাভেদে নিজেও টোটকা চিকিৎসাপদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন। সাবাহায়ে কেরাম নবীজির পরম নিশ্চিন্তে নববী চিকিৎসাপদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। কারণ নবীজি শরীয়তের ব্যাপারে নিজ থেকে কিছুই বলেন না। আল্লাহর পক্ষ থেকে যা আসে, তাই সাহাবায়ে কেরামকে বলেন। চিকিৎসাপদ্ধতি যদিও শরীয়তের অংশ নয়, তবুও নবীজির চিকিৎসা পদ্ধতি ফলপ্রসূ বলেই প্রমাণিত। যুগে যুগে প্রমাণিত হয়ে আসছে। আর নবীজি যেহেতু নবুয়তপূর্ব জীবনে কখনো চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন বলে প্রমাণ নেই, সেহেতু অভিজ্ঞজনেরা মনে করেন, নবীজির বাতলে দেয়া পথ্যগুলো ওহীর মাধ্যমেই প্রাপ্ত।
৩. দৃঢ় ইয়াকীন রাাখতে পারি, নববী চিকিৎসাপদ্ধতিতে সুনিশ্চিত নিরাময়ের আশ^াস রয়েছে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করা সুন্নাহ বলে বিবেচিত হবে। এমন একটি সুন্নাহসম্মত চিকিৎসাপদ্ধতি হচ্ছে ‘তালবীনা’ (تلبينة)। একপ্রকার স্যুপ যা যব, দুধ-মধু ইত্যাদি সহযোগে প্রস্তুতকৃত একটি পথ্যখাদ্য। তালবীনা রোগীর শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যকেও চাঙ্গা করে তোলে। তালবীনার রং লাবান বা দুধের মতো সাদা ও তরল হয়, তাই এটাকে তালবীনা বলা হয়। আয়েশা রা.-এর স্মৃতিচারণ,
أَنَّهَا كَانَتْ إِذَا مَاتَ المَيِّتُ مِنْ أَهْلِهَا، فَاجْتَمَعَ لِذَلِكَ النِّسَاءُ، ثُمَّ تَفَرَّقْنَ إِلاَّ أَهْلَهَا وَخَاصَّتَهَا، أَمَرَتْ بِبُرْمَةٍ مِنْ تَلْبِينَةٍ فَطُبِخَتْ، ثُمَّ صُنِعَ ثَرِيدٌ فَصُبَّتِ التَّلْبِينَةُ عَلَيْهَا، ثُمَّ قَالَتْ: كُلْنَ مِنْهَا؛ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: “التَّلْبِينَةُ مُجِمَّةٌ لِفُؤَادِ المَرِيضِ، تَذْهَبُ بِبَعْضِ الحُزْنِ
যখন আয়েশা রা.-এর পরিবারের একব্যক্তি মারা গেলেন। পাড়ার মহিলারা এসে মৃতের বাড়িতে জড়ো হলেন। তারপর পরিবারের লোকজন আর ঘনিষ্ঠজন ছাড়া সবাই চলে গেলেন। তারপর আয়েশা রা. একডেগ তালবীনা পাকাতে আদেশ করলেন। তারপর সারীদ প্রস্তুত করা হল। তারপর সারীদ গোশত ও রুটির টুকরা মিশিয়ে তৈরী খাবার)-এর মধ্যে তালবীনা ঢেলে দেয়া হল। তারপর আয়েশা রা. উপস্থিত নারীদের বললেন, তোমরা এখান থেকে খাও। কারণ আমি রাসূলুল্লাহকে বলতে শুনেছি- তালবীনা রুগ্ন ব্যক্তির চিত্তে প্রশান্তি আনয়ন করে, কিছুটা শোক-সন্তাপ লাঘব করে (বুখারী ৫৪১৭)।
৪. রাসূলুল্লাহর একান্ত জীবন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানতেন আম্মাজান আয়েশা রা.। তিনি নবীজির প্রতিটি আচরণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। পরম বিশ^স্ততায় উম্মতের কাছে প্রাপ্ত শিক্ষা পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন,
أَنَّهَا كَانَتْ تَأْمُرُ بِالتَّلْبِينِ لِلْمَرِيضِ وَلِلْمَحْزُونِ عَلَى الهَالِكِ، وَكَانَتْ تَقُولُ: إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: “إِنَّ التَّلْبِينَةَ تُجِمُّ فُؤَادَ المَرِيضِ، وَتَذْهَبُ بِبَعْضِ الحُزْنِ
আয়েশা রা. পীড়াগ্রস্ত ব্যক্তি ও কারো মৃত্যুতে শোকাতুর ব্যক্তিকে তালবীনা খেতে আদেশ দিতেন। আয়েশা রা. বলতেন, আমি রাসূলুল্লাহকে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই তালবীনা অসুস্থ্য ব্যক্তির অন্তরকে প্রশান্ত ও উদ্যমী করে এবং কিছুটা শোকদুঃখ দূর করে (বুখারী ৫৬৮৯)।
৫. তালবীনার ঔষধিগুণ বিশুদ্ধতম হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তালবীনা সেবনের সময় পরিপূর্ণ আস্থা রাখা আবশ্যই। বিশুাদ্ধ একীনের সাথে এই ‘আসমানী পথ্য’ আর ‘নববী আরোগ্য’ সেবন করলে, শরীরের পাশাপাশি আত্মাও সুস্থ্য হবে। পরিশুদ্ধ হবে। তালবীনা সর্বরোগের ওষুধ মনে করে সেবন করা যেতে পারে। সুন্নতী বরকত পাওয়ার আশায়। অভিজ্ঞজনেরা তালবীনা সেবনে নির্দিষ্ট রোগ উপশমের কথা বলেন,
১: মানসিক রোগ, বিষন্নতা দূর করে।
২: হৃদরোগ নিরাময়কারী।
৩: হৃদপি-কে সচল উদ্যমী তৎপর করে তোলে।
৪: ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৫: ডায়াবেটিকসের ঝুঁকি কমায়।
৬: ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে।
৭: কোলেস্টরেল কমায়।
৮: অ্যালঝেইমার বা বিস্মৃতিপ্রবণতা প্রতিরোধ করে।
৯: পাকস্থলির হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
১০: ইস্তিঞ্জা (মলমূত্র ত্যাগ) স্বাভাবিক করে।
১১: কোলন ক্যান্সার রোধ করে।
১২: কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৬. সুন্নাহ পালনের জন্য হলেও একবার পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। ঘরে নিজ হাতেও সহজেই বানানো যায়। রাব্বে কারীম আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।